স্বদেশ ডেস্ক:
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে নেই। তবে দলীয় প্রতীক ও প্রার্থী না থাকলেও এ নির্বাচনে দলটির স্পষ্ট ছায়া আছে বলে মনে করছেন অনেকে। এ ছায়া নিয়েই ‘হাতি’ প্রতীকে লড়ছেন দলের সাবেক নেতা তৈমুর আলম খন্দকার। তবে এই ছায়া সমর্থন নিয়ে তিনি ভোটযুদ্ধে কত দূর যেতে সক্ষম হবেন সেই আলোচনা এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।
তৈমুর আলম খন্দকার নিজেকে ‘কম্বিনেশন অব অল’ (সব দল-মতের সমন্বিত প্রার্থী) বলে দাবি করেন। গতকাল মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘আমি বুঝেশুনে দাঁড়িয়েছি। বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে আলাপ-আলোচনা করে প্রার্থী হয়েছি।’ তবে সরকারদলীয় মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর মতে, ‘কারও ওপর যত ছায়াই থাকুক, কোনো কিছুতেই কাজ হবে না। কারণ, ভোটাররা অলরেডি সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছেন, ভোট তারা কাকে দেবেন।’
জানা গেছে, তৈমুর আলমের ব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্রীয় অবস্থান নিয়েও স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে অস্পষ্টতা আছে। কারণ দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় তৈমুরকে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির আহ্বায়ক পদ থেকে ‘প্রত্যাহার’ করা হয়।
কিন্তু তারই নির্বাচনী প্রচারে প্রকাশ্যে অংশ নিচ্ছেন মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব এ টি এম কামালসহ অনেক নেতা। এদের মধ্যে তৈমুরের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট হয়েছেন এ টি এম কামাল। তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে বিএনপির এই অবস্থান কতটা নীতিগত আর কতটা কৌশলগত, তা নিয়ে অস্পষ্টতা আছে। এই অস্পষ্টতা নিয়েই নেতাকর্মীদের একটি অংশ তৈমুরের জন্য কাজ করছে, আরেকটা অংশ চুপচাপ রয়েছে।
এ নির্বাচনে অংশগ্রহণকে ‘আবেগ’ বলে মন্তব্য করেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব এ টি এম কামাল। তিনি বলেন, ‘এ নির্বাচনে বিএনপির না যাওয়ার পেছনে নিশ্চয়ই বড় কিছু আছে। আমরা স্থানীয় নেতা, এত কিছু বুঝি না। আমরা বুঝি নৌকার বিরুদ্ধে মানুষের ব্যাপক ক্ষোভ আছে, মানুষ সেটা ভোটের মাধ্যমে দেখাতে চায়।’
দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তৈমুরের এ নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে এ টি এম কামাল বলেন, ‘তিনি (তৈমুর) ২০১১ সালে মেয়র নির্বাচনে নিঃস্ব হয়ে গেছেন, কিন্তু নির্বাচন করতে পারেননি। এটি হয়তো তার শেষ নির্বাচন।’
এ ব্যাপারে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, তারা আগে যা-ই করেন না কেন, এই মুহূর্তে বর্তমান সরকার এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীন আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। কারণ দলটি সরকারের মেয়াদের শেষ পর্যায়ে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীন সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন গড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই প্রার্থী হওয়ার পর তৈমুরকে দলের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এদিকে, তৈমুরের ভোটের জন্য মাঠে সক্রিয় এমন বিএনপির নেতাদের হিসাব হচ্ছে, পরপর দুটি জাতীয় নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। নানা কারণে মানুষ সরকারের ওপর বিরক্ত। অন্যদিকে ‘সন্ত্রাসের গডফাদার’ হিসেবে পরিচিত শামীম ওসমানের বিরোধিতা করে আইভীর যে উত্থান, সেটার ধার এখন কমে গেছে। শামীম ওসমান ধারে বা ভারে কোনোটাতেই আগের অবস্থানে নেই। এ ছাড়া আইভী ১৮ বছর ধরে মেয়র আছেন। গৃহকর ও পানির বিল বৃদ্ধিসহ কিছু বিষয়ে মানুষের অসন্তোষ আছে।
এ বিষয়ে তৈমুর বলেন, ‘মানুষ বলে এটা একটা কৌশল। আমি বোকা মানুষ, এত কিছু বুঝি না। আমি মনে করি বিএনপি একটা বুদ্ধিমানের কাজ করেছে আমাকে মুক্ত করে দিয়ে। এখন আমি জনতার প্রার্থী। এখন আর ভোটের পাঁচ ঘণ্টা আগে কেউ বলার নেই যে বলবে, বসে পড়েন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক গত রোববার সিদ্ধিরগঞ্জ আওয়ামী লীগের কর্মিসভায় আমাকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘‘ঘুঘু দেখেছেন, ঘুঘুর ফাঁদ দেখেননি। টের পাবেন আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে।’’ ’ নানকের ওই বক্তব্যের পর আমি ঘুঘুর ফাঁদ দেখতে শুরু করেছি। আমার নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি শুরু হয়েছে।’
গ্রেপ্তার-হয়রানি বন্ধ না হলে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পুলিশ সুপারে কার্যালয়ের সামনে বসে পড়া ছাড়া তার আর কোনো উপায় থাকবে না বলেও জানান তৈমুর।